কুতর্কের দোকান বলতে কী বোঝায় অথবা তর্কে আমি কোথায় থাকি ও নাই

“সিরাজ সাঁই ডেকে বলে লালনকে
কুতর্কের দোকান সে করে না আর”

– লালন শাহ

১.

সিরাজ সাঁই, লালন শাহ ও তাদের অনুগামীদিগের তর্ক বিষয়ক রক্ষণশীলতার সমালোচনা হিসাবেই ‘কুতর্কের দোকান’ নামটা রাখা।

গঠনশীল, উৎপাদনশীল ও কাজের তর্ক থিকা লোকজনরে সরাইয়া আনার চেষ্টা এই দোকান।

যেই তর্ক সম্পর্কে উভয় পক্ষ জানে যে কাজের তর্ক তবে তারা কীসের তর্ক করে! মানে কিছু একটা ব্যাপারে উভয় পক্ষ রাজি, কেবল অনুষঙ্গ নিয়া তর্ক চলতেছে। খুব ভালো।

কিন্তু যেইখানে মূল আপত্তিই প্রশ্নসাপেক্ষ তাতে তর্কের বিষয় নিয়াই তর্ক দেখা দিতে পারে। মানে উভয় পক্ষ কোনো তর্কের মেরিট সম্পর্কে যখন একমত হয় না তখন কুতর্কের আবির্ভাব ঘটে।

এই রকম তর্ক থিকা ঠিক হয় যে বিষয়টা আদৌ তর্কের বিষয় কিনা।
২.

আমি সাধারণীকরণ, সরলীকরণ, মিথ্যাচার ইত্যাদিরে তর্কের বা আলাপের ভালো অবস্থা জ্ঞান করি। সত্যাচার যেহেতু আগেই নিজেরে সঠিক সাব্যস্ত কইরা আলাপ চালায় তাই ওই নিয়া আলাপ বা তর্কে মন সায় দেয় না।

তেমনি প্রমাণিত তথ্য-উপাত্তের তর্কেও আমি যুইৎ পাই না। যে তর্কের সিদ্ধান্ত তথ্য, উপাত্ত ও সত্যের বাটখাড়ায় নির্ধারিত হয় তা আসলে তর্কের বিষয় না। অথচ ‘যা উচিত তা সত্য’ বা ‘যা সত্য তা উচিত’-মূলক পপুলার তর্ক বা বিতর্ক বিদ্বৎসমাজে এবং দেশের উচ্চ বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ জনপ্রিয়।

সাধারণীকরণ বা সরলীকরণের লগে আলাপে যারা নাই তাদের লগে আমারও আলাপ বা টরকো নাই। বস্তুত যারা আমার সাধারণীকরণ বা সরলীকরণরে আলাপের অযোগ্য বিবেচনা করছেন তারা আগেই আমারে আলাপের অযোগ্য বিবেচনা কইরা বইসা আছেন।

৩.

‘কুতর্কের দোকান’ বিবদমান তর্কগুলার শক্তিকেন্দ্র আইডেনটিফাই করার চেষ্টা করে। তর্কের যে নিয়ম প্রশ্নহীনভাবেই গ্রাহ্য তার বাইরে তর্ক করার যুক্তি আবিষ্কারের উদযোগ এইটা।

‘নৈতিকতা’, ‘আইন’, ‘মানুষ’ ইত্যকার মায়াজালে যে তর্ক নিষিদ্ধ হইয়া আছে তারে প্রাণ দেওয়ার নিমিত্তে চালু হইছে এই দোকান।

ফকির লালন শাহ সিরাজ সাঁইয়ের দোহাই দিয়া যে দোকান বন্ধ কইরা দিছিলেন তা খোলা গেল এ অবসরে এই রিয়াল ওয়ার্ল্ডে।

প্রচলিত পদ্ধতির তর্কে দুই পক্ষের ধইরা নেওয়া নিশ্চিত বিন্দু থিকা আলাপ ও তর্ক আরম্ভ হয়।

কুতর্কে তেমন বিলাস নাই।

২০১৩-২০১৫

Leave a Reply