বুদ্ধিজীবীদের লইয়া আওয়ামী লীগ কী করবে!

১.
আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু বাংলাদেশের আওয়ামীপন্থী ব্লগার, বুদ্ধিজীবী ও বুদ্ধিজীবী ধরনের একটিবিস্টরা। দলের কর্মীরা নয়। বিএনপি তো নয়ই।

এই বুদ্ধিজীবীরা যেহেতু দেশ চালানোর বুদ্ধি ও কৌশলে শেখ হাসিনার বুদ্ধির শতাংশও না তারা শেখ হাসিনা শুনতে পাবেন এই আশায় কাজের কিছু বলার চাইতে পাকিস্তানের ভূত দিয়া দেশ ভইরা ফেলান। ভাবেন পাকিস্তান নিন্দার মাধ্যমেই নেত্রীর কাছের লোক হওয়া যাবে! তো শতমুখে পাকিস্তান নিন্দার বুদ্ধিচর্চা তারা করেন। যেন তাদের কাছে কেউ বলছে যে পাকিস্তান খুব ভালো একটা কিছু ছিল!

পাকিস্তান কীভাবে এই দেশে কার্যকর আছে, কীভাবে দেশের ক্ষতি করতেছে তা তারা বলেন না। কেউ শুনছেন? শুনলে বইলেন যে এই বলছে। বদলে পাকিস্তানের নিন্দার দ্বিতীয় ধাপ হিসাবে এই সেক্যুলাররা ইসলাম ধর্ম ও বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে খাড়াইয়া যান। এবং তাদের যে ফ্যানসমাজ আছে তাদের তারা খাম্বার মত দাঁড় করাইয়া দেন। এবং দেশ ও দলের বারোটা বাজান।

শাহবাগের দিকে তাকাইয়া দেখেন। এক শাহবাগ থিকা কত হেফাজত কায়েম হইছে! মুখে বলার দরকার নাই, মনে ভাবলেই হবে। তসলিমার পরে আর কেউ দেশে এত ধর্মের বাতাস বহাইতে পারে নাই। এখন ধর্ম দিয়া তৈরি কল নড়তে শুরু করছে।

২.
ধর্মের বিরোধিতা কইরা রাজনীতি থিকা ধর্মরে আউট করা যায় না। বরং ধর্মই রাজনীতির জায়গা নিয়া নেয়। তা কালে টের পাইবেন। এই বুদ্ধিজীবীরা সবচে বেশি পাইবেন। এবং আওয়ামী লীগের মুসলমান সম্পৃক্ততার তরফেই তা পাইবেন।

কারণ ধর্মের কৃত্রিম অনুকরণ থিকা যা হয় তা হইতেছে আরো বেশি বেশি ধর্মাচার। যেহেতু তা বাহ্যিক সেহেতু তা অতিশয় হয়।

৩.
তো আওয়ামী লীগের সামনে ‘হেফাজতের ১৩ দফা’ ধরনের রাষ্ট্রীয় ধর্মানুশীলনের চাইতে বড় কোনো বিপদ আর নাই মনে হয়।

আমেরিকা কেমন বিপদ তা বোঝা মুশকিল। তবে ভারত বিপদ। আওয়ামী লীগ তার আওয়ামী লীগত্বের কারণেই ভারতের শত্রু। এই শত্রুতার বন্ধুভাবাপন্নতা আছে। সেক্যুলার ভারত তার মুসলমান ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকল্পে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কখন কী অবস্থান নিবে তার ঠিক নাই।

ভারত কখনোই আওয়ামী লীগকে সেক্যুলার দল হইতে দিবে না। মুসলমান-বান্ধব তো না-ই। আওয়ামী লীগ মুসলমান-বান্ধব দল হইলে ভারতের কোটি কোটি মুসলমান ভোটার আওয়ামী স্বার্থের দিকে খানিক তাকাইয়া নিজেদের ভোট তাদের দেশের আওয়ামী-বান্ধব দলরে দিবে। তা কেন হিন্দু চৈতন্যের অধিকারী ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকদের চাহিদা হইতে যাবে! নিজের দেশের নেতানেত্রী কে বা কারা হবে তা তারা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড দিয়া ঠিক হইতে দিবে কী কারণে!

বিপদের দিক থিকা আর আছে প্রগতিশীলদের পাকিস্তান! পাকিস্তান কি বিপদ আওয়ামী লীগের জন্যে? হি হি, পাকিস্তান বিপদ এই কথা বললে ছাগলেও হাসবে; (এখানে ছাগল ছাগল বা গোট অর্থেই ধরতে হবে। তথাকথিত ছাগু অর্থে নয়। আমি ছাগু বলতে পছন্দ করি না। এই কারণে যারা আমাকে ছাগু বলবেন তারা বইলা নেন। অ্যাম আই ছাগু? ওকে ছাগু।) আর হাসবে পাকিস্তানপন্থীরা। তবে প্রগতিশীল পকেটের জন্যে এই মুলাটা আরো একশ বছর ঝুলাইয়া রাখা যাইতে পারে।

৪.
তো আওয়ামী লীগের বড় বিপদ হইতে যাইতেছে তাদের দ্বারা তৈরি হইতে থাকা ধর্মীয় আবহ। এই থিকা বাইর হইতে আওয়ামী লীগের আরো ওয়ে থাকতে পারে। আমি একটার কথা বলি।

এবং তা অত্যন্ত ক্লীশে।

এবং তা হইল দলে ও দেশে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করা।

অনেক টাকা আপনাদের হইছে। এখন এই টাকা রক্ষার জন্য যোগ্য গণতন্ত্র কায়েম করেন। নাইলে এই টাকাও রক্ষা করতে পারবেন না; রাজনীতি তো নাই-ই। আওয়ামী মুসলিম লীগ হইতে হইলে তারে আর আওয়ামী লীগ বলতে যাইবেন কোন দুঃখে? সেক্ষেত্রে আওয়ামী মুসলিম লীগ না হইয়া ধর্মপ্রাণ বাংলার মুসলমানদের মধ্যে ঢুকতে পারলে এবং তাদেরকে অন্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ভ্রাতৃ ও ভগ্নিসুলভ আচরণে অভ্যস্ত করতে পারলেই আওয়ামী লীগ একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। পাকিস্তানেরটাও পারবে। কিন্তু পাকিস্তানে আমাদের দরকার নাই। যেহেতু পরাশক্তি আমরা হইতে চাই না। নাকি, না?

৫.
এ পথে যাইতে গেলে বিরোধী দলীয় নেতানেত্রীদের বিরোধিতারে স্বীকার কইরা নিতে হবে। অন্যের কথা শোনার জন্য কান লম্বা করতে হবে ও জিহ্বা ছোট করতে হবে। সংসদে সবাইকে কথা বলতে দিতে হবে। যদি উন্নয়নের বর্তমান গতিও ঠিক রাখা যায় তবে উন্মুক্ত সংসদে নানাবিধ বিরোধিতার পরেও লোকে আওয়ামী লীগরেই ভোট দিবে। এর জন্যে দরকার যে-তখত আওয়ামী লীগ বিপুল ফার্সের মধ্য দিয়া দখল কইরা ফেলছে তারে দুই বছর বয়সী হইতে দেওয়া ও ততদিনে অতীব গণতান্ত্রিক দল হিসাবে নিজেরে অতিক্রম করা।

এবং বিএনপিরে দুর্বল শত্রু থিকা অক্ষম বন্ধুতে পরিণত করা। জিয়াউর রহমান বা খালেদা জিয়ার প্রচারিত কৃতিত্বগুলা স্বীকার কইরা তাঁদের পুরস্কৃত করতে পারে আওয়ামী সরকার। যেমন সরকার অনেক খাল কাটলে তা প্রয়াত জিয়ার নামে কাটা যাইতে পারে। এতে জিয়ার ভক্ত বাড়লেও আওয়ামী লীগের ক্ষতি নাই। যেমন শেখ মুজিবকে গ্রহণ করতে পারলে বিএনপির নিতান্ত লাভ।

এবং বিএনপির প্রতি করা অন্যায় অবিচারের ব্যাপারে ক্ষমা চাইতে পারে আওয়ামী লীগ। তা বিএনপির জন্যে নয়। দেশের লোকেরা যাতে আওয়ামী লীগকে মহানুভব গণতান্ত্রিক দল মনে করতে পারে সে জন্য। এমনিতেও ক্ষমা মহৎ কর্ম। যে ক্ষমা চায় সেই মহৎ হয়। যে ক্ষমা করতে বাধ্য হয় সে মহৎও হয় না অমহৎও হয় না। জাস্ট কিছু-নায় পরিণত হয়।

৬.
জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের ধারায় কথায় কথায় বিরোধী চিন্তার লোকদের পাকিস্তানে রপ্তানি করার যে ভার্বাল সংস্কৃতি তা বন্ধ করা ভাল। বিএনপিরে জামাতিদের থিকা দূরে যাইতে বলা যাইতে পারে যদি এইটা সরকারি দলের রাজনৈতিক কৌশল হয়। সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত জামাতধর্মী দলের থিকাও বিএপিরে সরাইয়া রাখার ব্যাপারে কী চিন্তা আওয়ামী লীগের? অবশ্য জামাতিদের কেউ কেউ তো আওয়ামী লীগে জয়েন করতে শুরু করছেনই। তা খারাপ কী!

৭.
বিরোধী দলরে কথা বলতে দেওয়ার মধ্যেই প্রথমত দলের ও পরে সরকারের শক্তিবৃদ্ধি। দলসম্পৃক্ত বুদ্ধিমান লেজুরদের পুচ্ছ নাড়ানোয় নয়। ‘রাজাকার’, ‘ছাগু’, ‘পাকিস্তানপন্থী’ ট্যাগ লাগাইয়া বিরোধী চিন্তারে পাকিস্তান পাঠাইবেন? সে দিন গেছে গা! এখন আর কোনো জনগোষ্ঠীরে এই ভাবে অন্য দেশে পাঠাইয়া মাতৃভূমি ক্লিন করা যায় না। জাতিসংঘের নিষেধ আছে।

আর যদি ভ্রমণের টাকা দিয়া পাঠাইতে চান, আমিও পাকিস্তান যাইতে রাজি। লগে আফগানিস্তানটাও ঘুইরা আসতে চাই। স্থানে পাপ আমি দেখতে পাই না। অ্যাম আই ছাগু? ওকে ছাগু।

৯ জানুয়ারি ২০১৪

Leave a Reply