সুমন রহমানের প্রবণতা নিয়া সেলিম রেজা নিউটন কি কিছু বলতে পারেন?

মধ্যবিত্ত মেয়েদের বাপমায়ের সামনে থিকা তুইলা নিয়া যাওয়ার হুমকি ও বাপমাকে হত্যা করা জনিত যে নতুন ভয় শহরে ব্যাপ্ত হইতে যাইতেছে তা নিয়া একটা লেখা লেখছিলেন সুমন রহমান, প্রথম আলো পত্রিকায়: তরল ভয়ের স্বরলিপি। সেইটা এফবিতেও আপ করছেন তিনি নোট আকারে। তার সেই লেখা নিয়া কথা বলতে গিয়া সেলিম রেজা নিউটন একটা নোট দেন (সুমন রহমানের ‘তরল ভয়ের স্বরলিপি’ প্রসঙ্গে )। আমি সুমন রহমান বিষয়ে সেলিম রেজা নিউটনের কিছু কথা নিয়া কথা কইতেছি।

সুমন রহমান
সুমন রহমান

২.

“নতুন শব্দ, চিত্র, উপমা, তুলনা, ইত্যাদি দিয়ে সবাইকে তাক লাগানোর, চমকে দেওয়ার প্রবণতা সুমনের পুরোনো। “সিরামিকের নিজস্ব ঝগড়া” কাব্যেও তাঁর এই বাসনার প্রকাশ আছে। ভালো পারফরমেন্স করার এই আকাঙ্ক্ষা সুমনের চিন্তাকে নিজের গন্তব্য-রূপকল্প নিয়ে ভাবার অবকাশ দেয় না। ”
– সেলিম রেজা নিউটন

নিউটন, আপনার কথায় সুমনের কীসে আপনার তাক লাগে তা জানা গেল। কিন্তু সেই তাক তিনি যদি লাগাইয়াও থাকেন আপনি তার ভাষার ইংগিত থিকা তেমনটা সিদ্ধান্ত করতে পারেন কিনা? কারণ আপনার এই সিদ্ধান্ত এই নিশ্চিতি উপস্থাপন করে যে আপনি সুমনের মনের / চিন্তার / অভ্যাসের / প্রবণতার খবর সুমনের সমান বা তার চেয়ে বেশি জানেন। সাহিত্য আলোচনায় তেমন জানার সুযোগ আছে কি?

’প্রবণতা’ শব্দের প্রয়োগ বোঝায় আপনার যেই জিনিস পছন্দ না তা কেন সুমন করে! অভ্যাস বা বৈশিষ্ট্য বললেও হয়তো খানিক ভিন্নার্থ ঘটত।প্রবণতা শব্দটার প্রয়োগ এইখানে (মনঃ)চিকিৎসা জনিত। যে, সুমন কেন এই প্রবণতার পরিসমাপন ঘটায় না। সুমনের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য (প্রবণতা) সুমনের সাহিত্য সাধনার অন্তরায়। হায় হায়!

অর্থাৎ সুমনের প্রবণতাই সুমনরে নিজের গন্তব্য আর নিজের কবিতার রূপকল্প নিয়া ভাবনের অবকাশ দেয় না। যদি সুমন তা ভাবতে পারতেন… যদি এই প্রবণতা তার না থাকত (তাইলে আর যাই হউক এই প্রবণতা নিয়া তার ভাবনের দরকার পড়তো না) তিনি তখন নিজের গন্তব্য আর নিজরে রূপকল্প নিয়া ভাবিত হইতে পারতেন। এখন নিউটন, আপনি তারে তিনটা জিনিস ভাবতে দিলেন:

১. তাক লাগানোর প্রবণতা।
২. সুমনের (চিন্তার) গন্তব্য।
৩. সুমনের (চিন্তার) রূপকল্প।

কিন্তু আপনি আগেই বইলা দিছেন যেহেতু সুমনের ১ নম্বর সমস্যা বিদ্যমান সুতরাং তার ২ ও ৩ নম্বর নিয়া ভাববার অবকাশ মিলবে না বা মিলে নাই।

আপনার কথার উপস্থাপনে এই আশা থাকতে হয় (যেহেতু তা অভিযোগ বা অনুযোগ বা সমালোচনা) যে এই প্রবণতা থাকলেও এই প্রবণতা নিয়া ভাববার অবকাশ সুমনের হবে। নাইলে আপনি এইটা তারে ধরাইয়া দিতে গেলেন কেন? (কিন্তু এমন ধরানি যে ধরান যায় না কেন তা পরে বলতেছি।) তো যদি প্রবণতাই ধরাইয়া দিতে পারলেন আপনি সুমনের গন্তব্য আর রূপকল্পও ধরাইয়া দিলেন না কেন? সুমনের প্রবণতা বোঝানোর বা সিদ্ধান্ত করবার অবকাশ যদি আপনার থাকে তাইলে তার গন্তব্য বা রূপকল্প কী হওয়া উচিত তাও তারে বাতলাইয়া দেওয়া যাইতে পারে। নাকি?

যদি তা বাতলাইয়া দেওয়ার বিষয় না হয় তাইলে তার প্রবণতা কী হওয়া উচিত তাও তো বাতলাইয়া দেওয়া যায় না।

৩.
সুমনের প্রবণতা বা অভ্যাসের সমালোচনা করলে তার অভিভাবক বা বড় ভাই বা চিকিৎসক বা শিক্ষক হিসাবে আমরা নিয়োগ পাইতে পারি। তা আপনি কি সুমনের এই দায়িত্ব নিবেন এখন? আমি এখনি নিতে চাই না। (আমি যখন বলব যে আপনিও চাইয়েন না তখন তা আপনার উপস্থাপনার মতই একটি অভিভাবকতায় পর্যবসিত হবে। তাই কিছু না বইলা সইরা গেলাম ভাই। আমি আপনার বিশ্লেষণ পছন্দ করি। কিন্তু অভিভাকত্বটুকু করি না।)

তবে সুমনের কবিতায় যে নতুন শব্দ, চিত্র, উপমা, তুলনা ইত্যাদির চমক বা তাক লাগানি থাকে তা পুরা কবিতার চেয়ে ঐ অংশটারেই চকমকে কইরা ফেলায় বটে। কিন্তু তা যে তার প্রবণতার কারণে ঘটে তেমন তো আমি বলতে পারি না। যেমন বলতে পারি না সুমনের বাড়ি ভৈরব বইলাই এমনটা ঘটে।

 

৭/৪/২০১০

 

Flag Counter

Leave a Reply